Header Ads

ডিজিটাল বাংলাদেশের কারগুজরী



ঘটনা ⇨১
বাড়ির একটি জায়গার খতিয়ান প্রয়োজন।সব তথ্য দিয়ে অনলাইনে আবেদন ফরম পূরণ করে প্রিন্টাউট করেছি।জমা দিতে হবে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ই-সেবা কেন্দ্রে।গেলাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে।প্রিন্টাউট কপিতে অনলাইনে দেয়া নির্দেশ মোতাবেক ২০ টাকার কোর্ট ফি যুক্ত করলাম।এবার ফরম জমা দেয়ার জন্য আবেদন ফরম গ্রহণকারী কর্মকর্তার কাছে গেলাম।উনাকে ফরমটা দিলাম,সাথে সাথেই উনি ফরমটি না-কচ করে দিলেন এবং বললেন," এটি এখানে জমা নেয়া হবে না"। বললাম, কেন?অনলাইনে যা তথ্য চেয়েছে সে মতে তো সব পূরণ করেছি,তারপরও আবেদন ফরম গ্রহণ করবেন না কেন!? উনি জবাব দিলেন,অনলাইন সার্ভারে নাকি সমস্যা,তাই অনলাইন ফরম আবেদনের সেবাটি এখনো চালু হয়নি।আমি ভদ্রলোককে বললাম,সার্ভারে সমস্যা হলে অনলাইনে কেমনে ফরম পূরণ করলাম?আমার ফরমটিই বা অনলাইন কেন গ্রহণ করল? উনি বললেন,"এসব জানি না। আপনার যদি খতিয়ান প্রয়োজন হয় তাহলে ভেন্ডার থেকে একটি খতিয়ান আবেদন ফরম কিনে,৩০ টাকার কোর্ট ফি লাগিয়ে পূরণ করে নিয়ে আসুন!" 
আমি আর কী করব,তাই উনার কথা মতে একটি আবেদন ফরম কিনে এবং তা পূরণ করে ৩০ টাকার কোর্ট ফি যুক্ত করে জমা দিলাম।এখন প্রশ্ন হচ্ছে,অনলাইনের আবেদন যদি গ্রহণই করা না হয় তাহলে অনলাইন আবেদনের সিস্টেমটি কেন রাখা হয়েছে? এই বুঝি ডিজিটাল বাংলাদেশ!একবার অনলাইনে ফরম পূরণ কর আবার সেইম ফরম অফলাইনেও পূরণ করে জমা দাও!
.
ঘটনা⇨২
আম্মুর জন্য পাসপোর্ট বানাতে হবে।কোন এজেন্সির কাছে না গিয়ে অনলাইনে আবেদন ফরম পূরণ করে সরকারি পাসপোর্ট অফিসে জমা দিলাম।উনারা ফরম জমা নিলেন। প্রায়ই এক মাস পার হয়ে গেল,কিন্ত এখনো পুলিশ ভেরিফাইয়ের কোন খবর নেই! আগ্রাবাদ পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে গিয়ে যোগাযোগ করলাম। একজন কর্মকর্তা আমার কাছে থেকে ডেলিভারি স্লিপ নিয়ে আম্মুর আবেদন ফরমটি খুঁজতে লাগল,অনেক সময় ধরে খুঁজাখুঁজির পর তা পেল। আবেদন ফরমটি ফাইলের অনেক নিচে পড়েছিল। যাহোক, ভদ্রলোক এবার ফরমটি আলাদা করে রাখলেন এবং আমাকে আমাদের লোকাল থানায় যোগাযোগ করতে বললেন। অত:পর আমি বাসায় চলে আসলাম। কয়েক সপ্তাহ পর আমাদের লোকাল থানা থেকে একজন এস.আই ফোন দিলেন, পাসপোর্ট আবেদনে দেয়া আম্মুর তথ্যগুলো যাচাই করার জন্য আমাদের বাড়িতে নাকি আসতেছেন। ঐ দিন আমরা বাড়ি ছিলাম না। এস.আই সাহেবকে সেটি বললাম। এস.আই সাহেব বললেন,"আমি অর্ধেক পথ চলে আসছি, এখন আবার থানায় ফিরে যেতে পারব না। আপনারা বাড়ি না থাকলেও সমস্যা নেই,আপনাদের প্রতিবেশি তো কেউ না কেউ থাকবে!" আমি আর উনাকে না করতে পারিনি। উনি বাড়ি আসলেন এবং আমাকে ফোন দিলেন।আমি উনাকে আমার জেঠাতো ভাইয়ের সাথে ফোনে যোগাযোগ করিয়ে দিলাম। উনি আম্মুর আইডি কার্ড,জন্ম নিবন্ধন সনদ,চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট এবং আমাদের বাড়ির খতিয়ান ইত্যাদি ডকুমেন্টগুলো চাইলেন। তখন আমি উনাকে বললাম," আমরা তো বাড়িতে নেই আপনাকে বলছি,এখন এই ডকুমেন্টগুলো আপনাকে আমরা কীভাবে দিব!?" উনি আমাকে দু'একদিনের ভিতর সব ডকুমেন্ট নিয়েথানায় গিয়ে উনার সাথে যোগাযোগ করার কথা বললেন। আম্মুর আইডি কার্ড আছে, কিন্ত জন্ম সনদ, চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট নেই। আমি সে কথা এস.আই সাহেবকে বললাম। উনি বললেন,সব ডকুমেন্টই নাকি লাগবে। ডকুমেন্টগুলো সংগ্রহ করার জন্য কয়েকদিন সময় চেয়ে নিলাম। এবার উনি যাওয়ার সময় ১০০০ টাকা খরচ চেয়ে বসলেন! অনেক কাকুতিমিনতির পর ৭০০ টাকায় রাজি হয়েছেন।টাকা আমার জেঠাতো ভাই থেকে নিতে বললাম।তারপর টাকা নিয়ে উনি চলে গেলেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে,একটি আইডি কার্ড একজন দেশের নাগরিকের পরিচয় পত্র। দেশের নাগরিক ছাড়া কেউ-ই আইডি কার্ডের মালিক হতে পারে না।আইডি কার্ড থাকা সত্ত্বেও জন্ম সন এবং চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট চাওয়ার মানে কী!? যদি জন্ম সনদ এবং চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট লাগে তাহলে আইডি কার্ডের কী প্রয়োজন!? একজন মানুষের কয়টা পরিচয়পত্র লাগে? আইডি কার্ড,জন্ম সনদ,চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট সবগুলো মিলিয়ে কি একটা পরিচয়পত্র করা যায় না? একজন মানুষ কয়টা পরিচয়পত্র সাথে নিয়ে ঘুরবে! সবগুলো সাথে নিয়ে ঘুরার নামই বুঝি ডিজিটাল!


খতিয়ানের জন্য অনলাইনে আবেদনকৃত ফরম

.
ঘটনা ⇨৩
পুলিশের কথা অনুযায়ী সবগুলো ডকুমেন্ট আমি জোগাড় করতে লাগলাম। জন্মসনদের জন্য অনলাইনে আবেদন ফরম পূরণ করলাম এবং প্রিন্টাউট কপি পৌরসভা কার্যালয়ে নিয়ে গেলাম। আবেদন ফরমে কাউন্সিলরের সীল এবং সিগনেচার প্রয়োজন।ফরমটি নিয়ে একজন কাউন্সিলরের কাছে গেলাম। উনাকে ফরমটি দিলাম। উনি জিজ্ঞেস করলেন,"এটি কী?" বললাম, জন্মসনদের আবেদন ফরম। উনি বললেন,জন্ম সনদের আবেদন ফরম নাকি ওরকম না! আমি বললাম,এটি আমি অনলাইনে পূরণ করেছি,এই জায়গায় আপনার সীল সহ সিগনেচার প্রয়োজন। উনি জবাব দিলেন,"অনলাইন আবেদন ফরম গ্রহণ করা হয় না। "
তারপর উনার ব্যাগ থেকে একটি অফলাইন আবেদন ফরম আমাকে দিলেন এবং বললেন, "এটিই জন্মসনদের আবেদন ফরম। ফরমের দাম ১০ টাকা।"আমি ফরমটি ১০ টাকা দিয়ে কিনে নিলাম এবং পূরণ করে জমা দিলাম। এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে,যদি অনলাইন জন্মসনদের আবেদন গ্রহণ করা না হয় তাহলে অনলাইন আবেদনের সিস্টেমটা কেন রাখা হয়েছে?একজন মানুষের অনলাইনে আবেদন করার পর তাকে আবার অফলাইনে টাকা দিয়ে ফরম কিনে আবার পূরণ করতে হবে কেন?অনলাইন -অফলাইন উভয়ই জায়গায় ফরম পূরণ করার নাম বুঝি ডিজিটাল!?

No comments

Ebrahim Bin Ismail . Theme images by duncan1890. Powered by Blogger.