Header Ads

স্বাধীনতা দিবসের প্রত্যাশা


ফটো

শামসুল ইসলাম
স্বাধীন। মানে বাধাহীন। স্বাধীনতা। মানে বাধাহীনতা।পরিভাষায় যার পরিচয়,মানুষকে মানুষের দাসত্ব থেকে মুক্ত করে একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী আল্লাহর দাসত্বের প্রতি নিয়ে আসা।
স্বাধীনতার বিপরীত শব্দ পরাধীনতা। অন্যের অধীনে থাকা। যেখানে নিজের ইচ্ছের, আনন্দের কোন অধিকার নেই। জেলবন্দি মানুষ অথবা খাঁচাবন্দি পাখি যেমন। অন্যদিকে মানুষ মাত্রই স্বাধীনচেতা। নিজেকে মুক্ত আকাশে উড়ন্ত পাখিই ভাবে সবাই। মানতে চায়না কোনো শিকল-শৃঙ্খল।
মানবজাত এ স্বভাবই মানুষকে স্থির থাকতে দেয় না। ফলে পরাধীনতার ইতি টানতে পৃথিবীজুড়ে সংঘটিত হয়েছে বহু স্বাধীনতা সংগ্রাম। এখনো চলছে। ভবিষ্যতেও চলবে স্বাধীনতা উদ্ধারের সংগ্রাম। চেষ্টা। পরিকল্পনা।
পৃথিবীর সাড়াজাগানো স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে অন্যতম স্থান দখল করে আছে বীর বাঙালির ‘৭১এর মহান স্বাধীনতার সংগ্রাম। কৃষক-মজদুর, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সবাই স্বাধীনতা লাভে উজ্জীবিত ছিল।
কতো রক্ত দিতে হয়েছে বাঙালিদের, কতো তাজা প্রাণ ঝরেছে এ সংগ্রামে, সে নির্মম কাহিনী শুনলেই পুরো শরীর কেঁপে ওঠে!
হানাদারবাহিনী গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছে। পাঞ্জাব পাঠান বাঙালি দেখলেই বাঘের মত এক হাতে গর্দন ধরে গাছের সাথে তালি দিয়ে থ্যাঁতলা করে নির্মম ভাবে কেড়ে নিয়েছে কতো প্রাণ!
কত বাঙালি মা বোনের ইজ্জত আভ্রু নষ্ট করেছে হায়েনার দল! কত নিষ্পাপ শিশুকে হত্যা করেছে নির্দয়ভাবে! কত লাশের পাশে পাকহানাদার বাহিনী উল্লাস করেছে শকুনের ন্যায়! খালে বিলে,নদীর কিনারে কত লাশের শ্যাওলা! কুকুর শৃগাল খাচ্ছে রাশি রাশি!!
আহ! কতো ভীবৎস ও নির্মম সে দৃশ্য!
এভাবে কতো প্রাণ ঝরলো। কতো মায়ের বুক খালি হলো। কতো স্ত্রী বিধবা হলো। কতো সন্তান তার প্রিয় মা বাবাকে হারিয়ে এতিম হলো। লাশের পাশে তাদের স্বজনহারা আর্তচিৎকারের কথা ভাবলেই কলজেটা জির জির করে ওঠে!
তবুও আমাদের অসহায় বাঙালি গর্জে উঠেছে। যদিও হোঁচট খেয়ে উপচে পড়েছে বারনবার! তবুও হাল ছাড়েনি। পিচু হটেনি। পালন করেছে অগ্রণী ভূমিকা শক্তি সাহস বুকে নিয়ে! কোমরে গামছা বেঁধে, কাঁধে বন্ধুক নিয়ে, আবার কেউ লাঠি-ঠেঙ্গা- দা বল্লম আর চাপাতি সঙ্গ করে ঝাঁপিয়ে পড়েছে সংগ্রামে। যুদ্ধ – জেহাদ করে এনেই ছেড়েছেন বিজয়! সকল বাধার পাহাড় ডিঙ্গিয়ে,কোয়াশার চাদর ভেদ করে,অনেক নির্মম কালো রাত পেরিয়ে, এক সোনালী সকালে, সূর্যোদয়ের সন্ধিক্ষণে, সবার মুখে উচ্চারিত হল, “জয় বাংলাদেশ” আলহামদুলিল্লাহ।
স্বাধীনতার আটচল্লিশ তম বছরে পদার্পণ করতে যাচ্ছি আমরা।
কিন্তু প্রকৃত স্বাধীনতা কি আদৌ পেয়েছি আমরা? যা ছিল আমাদের চাওয়া? আমাদের প্রত্যাশা?
পরিতাপের বিষয়, এতো যুগ পরে এসেও আমাদেরকে ভাবতে হচ্ছে, লিখতে হচ্ছে স্বাধীনতার আশা ও প্রত্যাশা নিয়ে। কারণ, সত্যিকারের স্বাধীনতার স্বাদ জনগণ পাচ্ছে না! ভাবতে পারছে না তারা স্বাধীন-সার্বভৌম দেশে বাস করছে!! মুক্তিযোদ্ধারা বিশ্বাস করছে না, এমন কিছুর জন্যই কি আমরা দেশের জন্য লড়াই করে স্বাধীন করেছি!!!
ভাবতে কষ্ট হচ্ছে, আজ স্বাধীন দেশে কতো বোন ধর্ষিত হচ্ছে। কতো নিরপরাধ মানুষকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হচ্ছ। গুম কার হচ্ছে। একের পর এক দুর্ঘটনা বেড়েই চলছে। এর সঠিক কোনো বিচারও হয় না!
দেশপ্রেমিক ব্যক্তিরা নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারে না প্রশাসনের আতংকে। মেয়েদের শিক্ষার অধিকার অনিশ্চিত বখাটেদের উৎপাতে। করের বোঝায় ব্যবসায়ীরা দেওলিয়া হবার পথে। এভাবে ব্যাংক, শিক্ষাব্যবস্থা, চিকিৎসাখাত ইত্যাদিতে ভাল কিছুর ভবিষ্যৎ নেই! দিন-দিন বন্ধুদেশের হাতে শিকলবদ্ধ হতে যাচ্ছি আমরা। বন্ধুরা হতে চায় প্রভু।
এ জন্যই কি তাহলে স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করিছিলো বাঙালিরা। অকাতরে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিলো!
স্বাধীনতার নামে এ কেমন পরাধীনতা!
আমরা চাই, বীর বাঙালি যে আশা ও প্রত্যাশা নিয়ে পরাধীনতার শিকল ভেঙে এ দেশ স্বাধীন করেছিলো, তা পূরণ হোক। বাস্তবায়ন হোক। দেশের সর্বত্রে বিরাজ করুক শান্তি-শৃঙখলা, জান-মাল ও ইজ্জতের নিরাপত্তা।
আর এ জন্য প্রয়োজন ইসলামি আইন কানুন ও বিধি বিধানের স্বতঃস্ফূর্ত অনুসরণ। কারণ, ইসলামই একমাত্র শান্তির ধর্ম। ইসলামকে বাদ দিয়ে কস্মিনকালেও শান্তির আশা করা যায় না।


লেখক-
কবি,কলামিস্ট

No comments

Ebrahim Bin Ismail . Theme images by duncan1890. Powered by Blogger.